22,2021 Friday at 21:42:48 | Share |
সুজন চসিক প্রশাসক, প্রধানমন্ত্রীর আস্থা রক্ষার প্রতিশ্রুতি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আজই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে।’
করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় মেয়াদ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিতে হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাসর উদ্দিনিকে। ফলে, সিটি করপোরেশন আইন, ২০০৯-এর ২৫ (১) ধারা অনুযায়ী সরকার মনোনীত প্রশাসকের হাতেই যাচ্ছে চসিকের দায়িত্বভার।
দায়িত্ব পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় খোরশেদ আলম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, এই পদে আসার জন্য আমি কোনো চেষ্টা-তদবির করিনি। ৫০ বছর ধরে মাঠে আছি। দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় পথ চলেছি। এটা চট্টগ্রামবাসী যেমন জানে, তেমনি জানেন জাতির জনকের কন্যা, আমার নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছেন আস্থা রেখেছেন, সেই আস্থার মর্যাদা জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো। সমস্ত মেধা, মনন দিয়ে নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে এগিয়ে যাবো।
খোরশেদ আলম সুজন ১৯৭০ সালে কাট্টলী স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ছাত্র রাজনীতির প্রথম অবস্থায় ১৯৭০ সালেই পাকিস্তান সরকার তথা আইয়ুব খান ‘‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি” নামক একটি বই ছাত্র সমাজের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। বইটির বিরুদ্ধে তৎকালীন সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ উম্মাতাল আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনে কনিষ্ট ছাত্র হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন সুজন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত বাঙালি সৈন্যদের সেবা শুশ্রুষার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামে সহযোগিতা ছিল খোরশেদ আলম সুজনের। সেই অংশগ্রহণে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিহারীরা তাকে দুই দুইবার ধরে নিয়ে গিয়েছিল হত্যা করার জন্য। পরবর্তীতে এলাকাবাসী গিয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসে।
১৯৭২ সালে কাট্টলী ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সুজন। ১৯৭৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন। এরপর কাট্টলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ অবিভক্ত ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ (বর্তমানে মহসিন কলেজ) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন সুজন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের ছাত্র ছিলেন সুজন। ১৫ আগস্টের সেই দিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে প্রথম একটি প্রতিবাদী মিছিল বের হয় আন্দরকিল্লা থেকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চট্টগ্রামের মিউনিসিপ্যাল বিদ্যালয় মাঠে প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেন একুশে উদযাপন পরিষদ নাম দিয়ে।
১৯৭৬ সালে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সুজন। ভর্তি হয়েই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্টা করেন। মাত্র ১৩ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু। ১৯৭৬-৭৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সুজন। পরবর্তীতে ১৯৭৯-৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০-৮২ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। ১৯৮২-৮৪ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮৬-৮৮ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি নির্বাচিত এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন খোরশেদ আলম সুজন।
এর পর মজুরী কমিশন আন্দোলনসহ বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন সুজন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ২ বার জেল খাটেন তিনি। ১৯৮৮-৯০ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সিবিএ ননসিবিএ সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। ১৯৯০-৯৮ সালে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী সংগঠনের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের অসহযোগ আন্দোলনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার নির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলন সফল করেন সুজন।(তথ্য সুত্রঃ একুশে পত্রিকা)।
User Comments



- চট্টগ্রাম